ইউটেরাস বা জরায়ু মহিলাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান, এটা বাচ্চা ধারণ করে এবং এখান থেকে প্রতিমাসে পিরিয়ডের ব্লিডিং হয়। জরায়ু অপসারণ বা হিস্ট্রেকটমি অপারেশন-এর মাধ্যমে ইউটেরাস বা জরায়ু ফেলে দেয়া হয়। ফলে এই অপারেশন-এর পর রোগীর পিরিয়ড হবে না এবং গর্ভধারণ করতে পারবে না। কারো কারো ক্ষেত্রে এই অপারেশন-এর সময় ওভারি এবং ফেলোপিয়ান টিউব (Fallopian tube)-ও অপসারণ করা হয়।
জরায়ু অপসারণ বা হিস্ট্রেকটমি অপারেশন-এর কারণএই অপারেশন বিভিন্ন কারণে করা হয়, যেমন-
১. ইউটেরাস (জরায়ু), সার্ভিক্স (জরায়ু মুখ) বা ওভারির যেকোন ক্যান্সার।
২. এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিনাইন (ক্যান্সার নয়) সমস্যার জন্যও ইউটেরাস ফেলা হয়, যেমন- ফাইবরয়েড টিউমার, এডিনোমাইসিস।
৩. এন্ডোমেট্রিওসিস।
৪. পিরিয়ডের সময় প্রচুর রক্তপাত, প্রচন্ড ব্যথা হলে।
৫. ইউটেরাইন প্রল্যাপস/জরায়ু নিচে নেমে আসা ইত্যাদি।
হিসট্রেকটমির বিকল্প কিছু আছে কি?প্রথমত অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হলে যখন কাজ না হয়, তখন জরায়ু অপসারণ করার অপারেশন-এর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অপারেশন ছাড়া রোগের আর যে সমাধানগুলো আছে তা হলো-
১) ফাইব্রয়েড টিউমারএক্ষেত্রে জরায়ু অপসারণ অপারেশন নির্ভর করে টিউমার-এর সাইজ এবং রোগীর সমস্যা কতটুকু তার উপরে। অনেক সময় কিছু ওষুধ রক্তপাত কমিয়ে দেয়, এমনকি টিউমার-এর সাইজ ছোট করে সাময়িকভাবে কষ্ট লাঘব করতে পারে। যারা বাচ্চা নিতে চান তাদের ক্ষেত্রে অপারেশন হলো মায়োমেকটমি (Myomectomy), এক্ষেত্রে শুধু টিউমার অপসারণ করা হয়।
২) এডিনোমাইসিস/এন্ডোমেট্রিওসিসব্যথা এবং ব্লিডিং কমানোর জন্য অনেক ধরনের হরমোনের ওষুধ এবং পেইন কিলার দেওয়া হয়। যারা বাচ্চা নিতে চায় তাদের জন্য ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে সিষ্ট অপসারণ, অ্যাডহেসিওলাইসিস (Adhesiolysis) করার মাধ্যমে প্রজননতন্ত্রের অ্যানাটমি ঠিক করা হয়।
৩) এক্সারসাইজইউটেরাইন প্রল্যাপস থাকলে বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ, যেমন কিগেলস এক্সারসাইজ দেয়া হয়।
এছাড়া ভ্যাজাইনাল রিং, পেজারি এবং ফদারগিলস অপারেশন হিস্ট্রেকটমি-এর বিকল্প হতে পারে।
কী কী উপায়ে অপারেশন করা যায়?• এবডোমিনাল অর্থাৎ পেট কেটে।
• ভ্যাজাইনাল।
• ল্যাপরোস্কপিক হিস্ট্রেকটমি।
কোন অবস্থায় ওভারি ফেলা হয়?এটা নির্ভর করে রোগীর বয়স রোগের ধরন এবং ওভারির অবস্থার উপরে। বয়স যদি মেনোপজের কাছাকাছি হয় তবে জরায়ুর সাথে ওভারি এবং ফেলোপিয়ান টিউবও ফেলে দেওয়া হয়, এতে করে পরবর্তীতে ওভারিয়ান ক্যান্সার হবার কোন সম্ভাবনা আর থাকে না।
ওভারি ফেলে দিলে কি সমস্যা হতে পারে?ওভারি মেয়েদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গান। এখান থেকে অ্যাস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোন আসে। ওভারি ফেলে দিলে এই হরমোনের অভাবে সার্জিক্যাল মেনোপজ শুরু হয়ে যাবে, অর্থাৎ রোগীর হাত পা জ্বালা করা, অস্থিরতা, ঘুমের সমস্যা, মুড সুইং, সহবাসের অনীহা, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য পরবর্তীতে অনেকের ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া লাগে।
সুস্থ হতে কতদিন লাগে?এই অপারেশনের দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই রোগী বাসায় যেতে পারে। এবডোমিনাল হিস্ট্রেকটমি-এর ক্ষেত্রে সাধারণত রোগী ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবে। ভ্যাজাইনাল এবং ল্যাপরোস্কোপিক অপারেশন-এর ক্ষেত্রে আরো আগেই অর্থাৎ ৪ সপ্তাহের মধ্যে রোগী সুস্থ হতে পারে।