জন্মগত ত্রুটির শতকরা ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, তবে কিছু বিষয় আছে যা গর্ভস্থ বাচ্চার জন্মগত ত্রুটির জন্য দায়ী।
শিশুর জন্মগত ত্রুটি ঝুঁকির কারণসমূহ১. মেডিসিন/ঔষধঅনেক গর্ভবতী মায়েরা আছেন যারা এসময়ে যেকোনো ঔষধ খেতেই ভয় পান। তবে স্বস্তিকর বিষয় হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা মেনে সঠিক ঔষধ খেতে কোন সমস্যা নেই, কারণ বেশিরভাগ ঔষধই নিরাপদ। বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর ঔষধগুলো pregnancy category C/D হয়ে থাকে। আবার ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে কোন সময়ে ঔষধ খাওয়া হচ্ছে তার উপর। সাধারণত গর্ভস্থ প্রথম তিন মাসে ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি থাকে, তাই এই সময়ে কোন ঔষধই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক না। উল্লেখ্য, ভিটামিন ঔষধ গ্রহণেও সতর্ক থাকতে হবে। যেমন, Ratinoic acid/Vitamin A ভ্রুণের ক্ষতিসাধন করে, আবার কিছু ভিটামিনের (যেমন ফলিক এসিড) অভাবে ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২. ইনফেকশন বা জীবাণু সংক্রমণপ্রেগনেন্সিতে জীবাণুর সংক্রমণ Birth defect-এর একটি বড় কারণ। বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণুগুলো হচ্ছে- Measels, Rubella, Toxoplasmosis, Cytomegalovirus, Zika virus ইত্যাদি। এইসব জীবাণুর আক্রমণে গর্ভস্থ বাচ্চার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতিসহ, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে থাকে। ঔষধের মতো এই জীবাণুর ক্ষতিও নির্ভর করে এটি কখন প্রেগন্যান্ট মাকে সংক্রমিত করেছে তার উপর।
৩. টক্সিক/বিষাক্ত পদার্থপরিবেশ দূষণকারী এবং পানিবাহিত বিভিন্ন টক্সিক পদার্থ গর্ভস্থ বাচ্চার আ্যবনরমালিটি ছাড়াও আরো অনেক গর্ভকালীন জটিলতা করে থাকে। এই টক্সিন পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রেট, নাইট্রাইট, লেড, ফ্লোরাইড ইত্যাদি।
৪. ধুমপান/আ্যলকোহোলপ্রেগনেন্সিতে ধুমপান/আ্যলকোহোলের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক। উন্নত দেশে কনসিভের আগেই এই অভ্যাস রোধে অনেক ধরণের প্রোগ্রাম এবং কাউন্সিলিং সেন্টার রয়েছে। প্রসঙ্গত, যেসব বাবা ধুমপানে অভ্যস্ত তাদের সন্তানদের জন্মগত ত্রুটি এবং কিছু চাইল্ডহুড ক্যান্সার (লিউকেমিয়া, ব্রেইন টিউমার) হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে ধুমপানের কারণে তাদের DNA mutations হয়,যা অনাগত সন্তানদের মধ্যে ট্রান্সমিশন হয়।
৫. জেনেটিক এবং ক্রোমোজোমজেনেটিক এবং ক্রোমোজোমাল ফ্যাক্টর বাচ্চার স্বাভাবিক গঠনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। এই আ্যাবনরমালিটিগুলো বাবা-মা থেকে ভ্রুণে ট্রান্সমিট হয়, আবার অনেক সময় ভ্রুণেও নতুন করে তৈরি হতে পারে। এছাড়াও বাবা/মায়ের অধিক বয়সে সন্তান গ্রহন, রেডিয়েশনের কারণেও ভ্রুণের গঠন পরিবর্তিত হতে পারে।
শিশুর জন্মগত ত্রুটি রোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে-• বাবা- মায়ের কোন জেনেটিক সমস্যা থাকলে কনসিভের আগেই পরামর্শ গ্রহণ ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
• চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়মিত ফলিক এসিড খেতে হবে।
• পরামর্শপত্র ছাড়া ঔষধ গ্রহণে বিরত থাকা।
• পরিবেশ দূষণ রোধ করা।
• ইনফেকশন প্রতিরোধক টিকা (Rubella vaxin) নেয়া।
• নিকট আত্বীয়-স্বজনের মধ্যে বিয়ে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।
• মায়ের বয়স ৩৫ এর বেশি হলে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
• রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে কনসিভের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।