সিজারিয়ান সেকশন (Cesarean section) অন্যতম একটি নিরাপদ ও জনপ্রিয় ডেলিভারি পদ্ধতি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সিজার পরবর্তী সময়ে মা ও শিশুর কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যা কোন কোন সময়ে দুজনের জন্যই মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মা ও শিশুর ক্ষেত্রে যে সব সিজার পরবর্তি জটিলতা দেখা যায়১) মা-এর ক্ষেত্রে ঝুঁকিসমূহমায়ের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার কারণ বা রিস্ক ফ্যাক্টর (risk factor) নির্ণয় করা কঠিন। তবে বেশির ভাগ সময়ে নিচের ফ্যাক্টর-গুলো প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
• স্থুলতা
• বাচ্চার আকার
• জরুরি জটিলতা যখন দ্রুত সিজারিয়ান ডেলিভারি প্রয়োজন হয়
• সার্জারি
• একাধিক সন্তান থাকা
• কিছু ওষুধের প্রতি প্রতিক্রিয়া
• গর্ভকালীন সময়ে রক্তের অভাব
• প্রি-ম্যাচিউর প্রসব বেদনা
• ডায়াবেটিস
সিজারিয়ান ডেলিভারি-এর পর সংক্রমণ১) এন্ডোমেট্রাইটি্সএই ধরনের অপারেশন-এর পরে ইউটেরাস (Uterus) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। যদি সিজারিয়ান সেকশন-এর পর ব্যাকটেরিয়া ইউটেরাস-এ যে ইনফেকশন বা সংক্রমণ-এর সৃষ্টি করে তাকে মেডিকেল-এর ভাষায় বলা হয় এন্ডোমেট্রাইটি্স (Endometritis)। একে সিজারিয়ান ডেলিভারি-এর একটি সরাসরি ফলাফল বললেও ভুল বলা হয় না। কারণ, যে সব মহিলাদের সিজারিয়ান ডেলিভারি হয় তাদের মধ্যে এই ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় (৫-১০)% বেশি।
২) পোস্ট সিজারিয়ান ইনফেকশনএই অপারেশন-এর পর শুধুমাত্র যে ইউটেরাস-এই ইনফেকশন-এর সম্ভাবনা থাকে তা না, বাইরের চামড়ার স্তরেও অনেক সময় এটা দেখা দেয়। একে প্রায়ই বলা হয় পোস্ট সিজারিয়ান ইনফেকশন (post cesarean infection)। জ্বর, পেটে ব্যথাও এর সাথে দেখা দিতে পারে। চামড়ার বা টিস্যুর অন্য যে কোন স্তরের ইনফেকশন সাধারণত অ্যান্টি-বায়োটিক দিয়ে সারানো হয়।কিন্তু যদি এই ধরনের ক্ষত খুব দ্রুত সারানো না হয়, তবে সেটা সহজেই ঘা বা পুঁজ-এর সৃষ্টি করতে পারে। তীব্র জ্বরের সাথে প্রস্রাবের ইনফেকশন (urine infection)-ও দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে।
৩) রক্তপাতকখনো কখনো অন্য কোন জটিলতা থেকে অনেক বেশি রক্তপাত হতে পারে সিজারিয়ান ডেলিভারি-তে।এই ধরনের জটিলতাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয়- পোস্ট প্যারটাম হেমোরেজ (Postpartum hemorrhage)। যখন শরীরের কোন অঙ্গ কাটা-ছেড়া করা হয় কিন্তু রক্তনালী সঠিকভাবে সেলাই করা না হলে অথবা প্রসব যন্ত্রণার কোন জরুরি পরিস্থিতিতে রক্তপাত দেখা দিতে পারে। যদিও এই জটিলতার সম্ভাবনা দিন দিন কমে আসছে তাও অন্তত ৬% ডেলিভারি-তে এটি এখনও দেখা যায়। যার ফলাফল স্বরূপ রক্তাল্পতা বা অ্যানেমিয়া (Anemia) ধরা পরে।
৪) রক্ত জমাট বাঁধাসম্ভবত এটিকেই সবচেয়ে ভীতিকর জটিলতা হিসেবে ধরা হয়। অনেক সময় এই জমাট বাঁধা রক্ত ফুস্ফুসেও ছড়িয়ে যেতে পারে।অনেক উন্নত দেশেও মায়ের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে একে দায়ী করা হয়।
৫) ওষুধে প্রতিক্রিয়াকিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে ওষুধ বা অ্যানেস্থেসিয়া (Anesthesia) -এর জন্য বিরূপ প্রভাব দেখা যায়। যদিও এই সমস্যা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম।
৬) পরবর্তী সন্তান ধারণে জটিলতাকিছু সিজারিয়ান ডেলিভারি-এর জটিলতা যেমনঃ হিস্টেরেক্টমি (hysterectomy)-এর কারনে পরবর্তী সন্তান ধারণ অসম্ভব হয়ে পরে। তারপরও মা যদি সুস্থও হয়ে উঠে সার্জারি-এর পরে তাও পরবর্তী সন্তান ধারণে যথেষ্ট ঝুঁকি থেকে যায়।এই ধরনের সার্জারি ইউটেরাস বা জরায়ুকে দুর্বল করে ফেলে। তবে আশার কথা এটাই যে এখন এই ধরনের সার্জারি-এর পরে সন্তান গ্রহন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ।
শিশুর ক্ষেত্রে ঝুঁকিসমূহমা ছাড়াও শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। নিচের জটিলতাগুলো শিশুর শরীরে অনেক বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।যেমনঃ
১. কম বয়সী মায়ের অপরিণত শিশুর জন্মদানসুস্থ সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে মায়ের বয়স অনেক বড় একটি ফ্যাক্টর। ২০ বছরের কম বয়সী মায়ের সন্তান অনেক সময়ই জন্মগত ত্রুটির শিকার হয়।
২. শ্বাসকষ্টসিজারিয়ান বাচ্চাদের অনেক সময় শ্বাসকষ্ট সমস্যায় কষ্ট পেতে দেখে যায়।
৩. কম ওজন ও আকারের শিশুমায়ের দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টি, খাবারে অরুচি,অন্যান্য অসুখের প্রতিক্রিয়ায় অনেক সময় শিশুর ওজন ও উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। এর ফলে শিশুর দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যহানি ঘটে।
৪. ইনফেকশনমায়ের মতো শিশুর চামড়া, রক্তনালী বা কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যা অনেক সময় শিশুটির জীবনে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সিজারিয়ান ডেলিভারি-এর পর শিশুর যত্ন ঠিকমতো না নেয়া হলে অথবা অসাবধানতায় থাকলে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক ও পরিবেশের জন্য খুবই জরুরি।