Author Topic: গর্ভকালীন সময়ে কি অ্যাজমায় ভুগছেন?  (Read 309 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

LamiyaJannat

  • Guest
অ্যাজমা (Asthma) হল শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ। এর কিছু লক্ষণ হল শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, শ্বাসের সময় শব্দ হওয়া, বুকে ব্যথা অনুভব, কাশি। এসব লক্ষণ সাধারণত  রাতের দিকে বেশি অনুভুত হয়। এ রোগে বাইরে থেকে কিছু স্টিমুলেটিং বস্তু বা অ্যালার্জি শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহের সৃষ্টি করে এবং এর গঠনগত পরিবর্তন করে। এর ফলে বায়ু চলাচলের পথ সরু হয়ে শ্বাসকষ্ট হয়।
 
অ্যাজমার প্রকোপ ঘটাতে পারে এমন কিছু কারণ
•   ধুলোবালি,ফুলের রেণু ,ঠান্ডা আবহাওয়া।
•   শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম।
•   পরিবেশ দূষণ, সিগারেটের ধোঁয়া।
•   মানসিক চাপ।
•   প্রেগনেন্সি।

গর্ভকালীন অ্যাজমা কী কী কারণে হতে পারে?
১) বাচ্চা গর্ভে থাকা অবস্থায় মায়েদের কমবেশি শ্বাসকষ্ট হওয়া একটি সাধারণ বিষয়। কারণ গর্ভাবস্থায় ফুসফুসের অবস্থানের পরিবর্তন ও হরমোনের তারতম্যের কারণে এমনটি হয়ে থাকে। তাই এ সময় কেউ যদি প্রথমবারের মত অ্যাজমার লক্ষণ নিয়ে আসে, তবে তা নির্নয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এটি স্বাভাবিক প্রেগনেন্সির জন্যও হতে পারে আবার অন্যান্য প্যাথলজিও থাকতে পারে, যেমন অ্যাজমা, থাইরয়েড হরমোনের অ্যাবনরমালিটি, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি। তাই অ্যাজমা নির্নয়ের জন্য দরকার সঠিক হিস্ট্রি ও পর্যবেক্ষণ।
২) গর্ভবতী নারীদের প্রতি একশ জনে ৩-৪ জন অ্যাজমায় ভুগে থাকে। গর্ভকালীন সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে (৫০%) অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে শ্বাস কষ্ট বাড়ে (৩০%) এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শ্বাসকষ্ট কমেও যেতে পারে।
৩) অনিয়ন্ত্রিত অ্যাজমা গর্ভধারণকালীন সময়ে মা ও বাচ্চার জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে যেমন, কম ওজনের বাচ্চা জন্মদান, সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব, মায়ের ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া, প্রি-এক্লাম্পসিয়া (Preeclampsia) ইত্যাদি।

পরিণতিতে অনিয়ন্ত্রিত অ্যাজমা মা ও বাচ্চার অধিক মৃত্যু ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকলে তা প্রেগনেন্সিতে তেমন ক্ষতিকর নয়।

গর্ভকালীন অ্যাজমা হলে কিছু করণীয়
(১) যেসব গর্ভবতী মা অ্যাজমায় আক্রান্ত বা গর্ভাবস্থায় এটি ধরা পরেছে তাদের উচিত প্রথম থেকেই একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিয়মিত তত্বাবধানে থাকা। প্রত্যেক মায়ের শ্বাসকষ্টের পরিমাণ অনুযায়ী আলাদা চিকিৎসা প্ল্যান থাকে। শ্বাসকষ্টের জন্য প্রচলিত দুটি ইনহেলার হল Beta-adrenergic agonist ও Corticosteroid ইনহেলার।
এছাড়া মুখে খাবার জন্য অন্যান্য ঔষধের মধ্যে রয়েছে থিওফাইলিন (Theophylline), মন্টিলুকাস্ট (Montelukast), কিটোটিফেন (Ketotifen), স্টেরয়েড ট্যাবলেট (Steroid Tablets)। অ্যাজমায় আক্রান্ত মায়েদের একটি বিষয়ে নিশ্বিন্ত করা প্রয়োজন যে এ রোগে ব্যাবহৃত এই ঔষধ গুলো গর্ভের বাচ্চার জন্য নিরাপদ। দেখা যায় আনেকেই গর্ভস্ত বাচ্চার ক্ষতির কথা ভেবে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে হঠাৎ করে ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, যার ফলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং অনেক সময় তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
(২) হজমে সমস্যা বা বুক জ্বালাপোড়া অ্যাজমার প্রকোপ বাড়াতে পারে। তাই ঔষুধের মাধ্যমে এসিড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, একবারে বেশি না খেয়ে বার বার অল্প করে খেতে হবে এবং খাওয়ার তিন থেকে চার ঘণ্টা পর ঘুমোতে যাওয়া উচিত।
(৩) যে মায়েদের শ্বাস কষ্টের প্রকোপ বেশি থাকে তাদের উচিত গর্ভধারণের সাত মাস পর হতেই নিয়মিত বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল করা। বাচ্চার নড়াচড়া কম মনে হলে তা ডাক্তারকে জানানো উচিত।
(৪) যেসব অ্যালার্জি জাতীয় দ্রব্যাদির কারণে অ্যাজমার প্রকোপ বাড়তে পারে তা থেকে দূরে থাকতে হবে। এতে করে ঔষধ ব্যবহারের পরিমাণ কম থাকবে। অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দেয়া যেতে পারে যা গর্ভধারণকালীন যেকোন সময় দেয়া যায়।
(৫) অ্যাজমায় আক্রান্ত মায়েদের নিয়মিত তাদের বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে উৎসাহিত করা হয়, এতে করে বাচ্চা মায়ের কাছ থেকে তার প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি পাবে যা তাকে পরবর্তীতে অ্যাজমার বা যেকোন অ্যালার্জির আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখবে।