Author Topic: জানেন কি কোন ফ্যাট শরীরের জন্য ভালো?  (Read 208 times)

0 Members and 3 Guests are viewing this topic.

LamiyaJannat

  • Guest
অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে দেখা যায় তারা সকল প্রকার তেল চর্বি যুক্ত খাদ্যকে খাদ্য তালিকা হতে বর্জন করে। কারণ – ফ্যাট শরীরকে মেদ বহুল করে বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু কথাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়
স্বাভাবিক ভাবে ভাবলে “ফ্যাট” কে শত্রু মনে হবে, কিন্তু শরীরে কিছু ফ্যাটের প্রয়োজন আছে।ফ্যাট ব্যাতিত শরীরে খনিজ লবন এবং ভিটামিন শোষণে সম্ভব হয় না, আবার ফ্যাট শরীরের কোষ গঠন, নার্ভ এর চারদিকের আবরণ তৈরি করে।
তাই, আসুন আমরা ফ্যাটের সেই উপকারি, অপকারি দিক এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে যা আমাদের জানা নেই।

ফ্যাট কি আপনার ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগের জন্য দায়ী?

নামের কারণে মনে হতে পারে ফ্যাট ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী। ফ্যাট আসলে “ওজন বৃদ্ধি” নামক সমস্যার একটি মাত্র কারণ, মূল কারণ নয়। কেননা একটি মাত্র খাদ্য উপাদান অতিরিক্ত গ্রহণ করা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে না। সহজ কথায়, যে সকল ব্যাক্তিরা কম শারীরিক পরিশ্রম করে থাকে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে থাকে তাদের ওজন বৃদ্ধি হয়। সুতরাং ফ্যাট এখানে এক মাত্র সমস্যা নয়।বংশ, লিঙ্গ, বয়স, দৈনন্দিন জীবনযাপন ওজন বৃদ্ধির ফরমুলা এখানে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে আলোচনা করলে বলতে হবে যে, ১ গ্রাম ফ্যাট হতে ৯ ক্যালোরি শক্তি, ১ গ্রাম প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট হতে ৪ ক্যালোরি শক্তি এবং অ্যালকোহল হতে ৭ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। যেহেতু সকল খাবার বিভিন্ন উপাদানসমূহের সমষ্টি সেহেতু অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের অর্থ হলও অতিরিক্ত সকল ধরনের খাদ্য উপাদান গ্রহণ।
যেহেতু এই প্রবন্ধটি ফ্যাট সম্পর্কিত তাই এই অংশে ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগের জন্য শুধু ফ্যাট এর ভূমিকা আলচোনা করা হবে। তাই দন্দে পদার্পণের আসুন জেনে নেই ফ্যাট এর ভালো, মন্দ, মন্দের ভালো দিক সম্পর্কে ।

ভাল ফ্যাট বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ
ভালো ফ্যাট এর উৎপত্তি মাছ, বীজ, বাদাম এবং সবজি থেকে। এরা সাচুরেটেড ফ্যাট(খারাপ ফ্যাট) হতে ভিন্ন হয় দুই ভাবে। যথা —
• স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সাধারণ তাপমাত্রায় তরল
• এবং কম পরিমান হাইড্রোজেন পরমাণু কার্বন চেইনের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দুই ধরনের হয়- ক)মনোআনসাচুরেটেড এবং খ)পলিআনসাচুরেটেড।

ক)মনোআনসাচুরেটেড ফ্যাট
সরিষার তেল দিয়ে ভর্তা খেতে আমদের কম বেশি সকলেরই ভালো লাগে।বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা প্রমান হয়েছে যে মনোআনসাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়। শুধু সরিষার তেল নয় রয়েছে আর অনেক মনোআনসাচুরেটেড ফ্যাট
• বাদাম (চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম)
• ভেজিটেবেল তেল (বাদাম তেল, অলিভ তেল, সরিষার তেল)
• চিনাবাদাম ও কাঠবাদাম মাখন

খ)পলিআনসাচুরেটেড ফ্যাট
উদ্ভিদ হতে প্রাপ্ত ফ্যাট সমূহ হল এধরনের ফ্যাটের মূল উৎস। মনোসাচুরেটেড ফ্যাটের মত পলিসাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে রক্তে কোলেসটেরলের পরিমান কমানর মাধ্যমে। বিভিন্ন প্রকার পলিআনসাচুরেটেড ফ্যাটের উদাহরণ দেয়া হলঃ
• বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ তেল- সূর্যমুখী তেল, সরিষার তেল, নারকেল তেল
• বীচি – (সূর্যমুখীর বীচি, মিষ্টি কুমড়ার বীচি)
• নরম মারজারিন

খারাপ ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাটঃ
খারাপ ফ্যাট এর মধ্যে ট্রান্স ফ্যাটকে সবচেয়ে খারাপ হিসেবে গণ্য করা হয়।খারাপ বলার পেছনেও রয়েছে একটি ইতিহাস। ট্রান্স ফ্যাট এর উৎপত্তি বিংশ শতাব্দির দিকে, যখন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন স্বাস্থ্যকর তেল সমূহকে “হাইড্রোজিনেসোন” এর মাধ্যমে কঠিন পদার্থ তৈরি করে পচন রোধ করা যায়। স্বাস্থ্যকর তেল সমূহকে “হাইড্রোজিনেসোন” করলে উৎপন্ন দ্রব্যের পচন রোধ হয় কিন্তু তার সঙ্গে কিছু অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটেরও উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার ব্যবসায়িদের জন্য বেশ লাভ জনক হয়ে উঠল। কেননা, তেল এর পচন রোধ হচ্ছে, বেশি দিন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে তথা আর্থিক দিক দিয়ে সকলে লাভবান হচ্ছে । কমার্শিয়াল ক্ষেত্রে তাই ট্রান্স ফ্যাট বেশি ব্যবহার করা হয়, ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট এর প্রতিটি খাবার তাই আজ আমাদের কাছে এত লোভনীয়!
ট্রান্স ফ্যাটের কিছু উদাহরণ-
• বেকড খাবার – কেক, ডোনাট, মাফিন, পাই ইত্যাদি
• ডুবো তেলে ভাজা খাবার, বেশি তেল জাতীয় খাবার
কি হবে ট্রান্স ফ্যাট খেলে?

অধিক পরিমান ট্রান্স ফ্যাট খেলে ক্ষতিকর LDL এর পরিমান বেড়ে যাবে যা ভালো HDL এর পরিমান রক্তে কমিয়া দিবে।ইনসুলিন এর পরিমান রক্তে কমিয়া টাইপ-২ ডাইবেটিকস এর আশঙ্কা বাড়ায়। একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিন ২% ট্রান্স ফ্যাট গ্রহনে ২৩% হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মোট কথা ট্রান্স ফ্যাট গ্রহনে শরীর এর কোন উপকার নেই এবং মানব দেহে এর কোন চাহিদাও নেই। বর্তমানে আমাদের অগোচরে প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় এই ট্রান্স ফ্যাট।

মন্দের মধ্যে ভালো ফ্যাট বা সাচুরেটেড ফ্যাটঃ
এসকল ফ্যাট সাধারনত প্রানি উৎস, অধিক চর্বি সম্পন্ন মাংস এবং দুধ জাতীয় উপাদান হতে পাওয়া যায়। সাচুরেটেড ফ্যাটের উদাহরণ সমূহঃ
• গরুর, খাসির মাংশ
• ঘন দুধ, মাখন, পনীর, মিষ্টি দই , আইসক্রিম
• নারকেল তেল, পাম তেল

কি হবে সাচুরেটেড ফ্যাট খেলে?
অত্যাধিক পরিমান সাচুরেটেড ফ্যাট ওরফে “খারাপ ফ্যাট” রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা, LDL(Low Density Lipoprotein), টাইপ-২ ডাইবেটিকস এর আশঙ্কা বাড়ায়।এজন্য ডায়টেসিআনরা বলে থাকে প্রতিদিন ১০% এর অধিক সাচুরেটেড ফ্যাট না খেতে। তার মানে, কিছু পরিমান সাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া যাবে।
সাচুরেটেড ফ্যাট কিছু পরিমান খেতে বলার কারণ হলও গবেষণার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে যে, সাচুরেটেড ফ্যাট পলিআনসাচুরেটেড ফ্যাট(উদ্ভিদ তেল, আঁশ জাতীয় খাবার) হতে খারাপ তবে শর্করা জাতীয় খাবার হতে ভাল।

আমাদের সকলের প্রিয় ফাস্ট ফুডের ইতিকথা
মানুষের মানসিক চাহিদা ও স্বাদের উপর গবেষনা করে ফ্যাট জাতীয় খাবার কে করে তোলা হয়েছে লোভনীয় এবং অনেক ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য উপাদান। ফ্যাট জাতীয় খাবারের মধ্যে বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয় খাদ্য হলো “ফাস্ট ফুড”, যা আতি লোভনীয় হলেও দেহের জন্য অপরিহার্য নয়। ফাস্ট ফুডের কিছু বাস্তব সত্য কথা,

• ফাস্ট ফুডে রয়েছে “অত্যাধিক লবণ” এবং “পুরানো তেল ”
চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং ফ্রাইড খাবারের মূল আকর্ষণ তার সোনালী আবরণ যা তেলে ভাজার কারণে হয়ে থাকে। অতি দুঃখের ব্যাপার অধিকাংশ ক্ষেত্রে রেস্টুরেন্টে ব্যবহৃত তেল অনেক পুরানো হয়ে থাকে। ব্যবহৃত তেল খাবারের অবশিষ্টাংশ দীর্ঘদিন থাকার ফলে তার পচন আরম্ভ হয়। এরূপ পচন ধরা পুরানো তেলে যখন আবার কোন খাবারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তখন তা গ্রহণ করে ভোক্তা খুশি হলেও শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
সহজ কথায়, ফাস্ট ফুড হলো পুরানো তেলে অত্যাধিক লবণ যুক্ত খাবার কে ভাজা।

• নিম্ন মানের খাদ্যের ব্যবহার

রেস্টুরেন্ট যদি শুধু “অত্যাধিক লবণ” এবং “পুরানো তেল ” যুক্ত খাবারই নয় ব্যবহার করে “অতিনিম্নও মানের খাদ্য উপাদান”।যদিও লিফলেট ও বিলবোর্ডে বার্গারের সুন্দর লেতুস পাতা, শশা, টমেটোর ছবি আমাদের মন কাড়লেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব পাওয়া কঠিন। চিকেন ও বীফ এর ক্ষেত্রে তারা কোন পশু ব্যবহার করছে তা আজ সন্দেহের ব্যাপার।

• ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ
বেশির ভাগ ফাস্ট ফুডে কোন পুষ্টিগুণ থাকেনা বরং থাকে অত্যাধিক পরিমাণ ক্যালরি। যদি কোন ব্যাক্তি নিয়মিত ফাস্ট ফুড গ্রহণ করে এবং পরিশ্রম দ্বারা সমপরিমাণ ক্যালরি
বর্জন না করে তবে ব্যাক্তির ওজন বাড়তে থাকবে।
১০০ গ্রাম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই = ৩১২ ক্যালরি
১টি বার্গার = ৫৪০ ক্যালরি
৫০০ মিলি মিল্কশেক = ৬৭০ ক্যালরি
১টি সমুচা = ৩০৮ ক্যালরি

• শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে

ফাস্ট ফুডে থাকে উচ্চ পরিমাণ ফ্যাট যা রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে হৃদরোগ জনিত সমস্যার সৃষ্টি করে। এসকল খাদ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রিজারবেটিভ দেহে ক্যানসার সৃষ্টি করে । এছাড়াও বমি বমি ভাব, কোষ্টকাঠিন্য, দাঁতে ব্যাথা সহ অন্যান্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ফ্যাট জাতীয় খাবার কেন এত সুস্বাদু?
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আইস-ক্রীম, পিঠা, বার্গার, রেডি-মেইড খাবার, চকলেট, পনীর – নাম মনে হতেই জিভে পানি চলে আসে। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে।স্বাদ ও ঘ্রাণ মূলত খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি করে। “মচমচে” ও “ক্রিমি” ভাব ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রভাব তৈরি করে যা অন্য খাবারের তুলনায় এই খাবারকে করে তোলে আকর্ষণীয়। সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার, যার উপর ভিত্তি করে ফাস্টফুড, স্নাক্স জাতীয় খাবার তৈরি করা হয়।
উদাহরণ হিসেবে, চিকেনকে বা আলুকে যখন গরম তেলে(২১২ ফারেনহাইট তাপমাত্রার অধিক)ডুবান হয় তখন প্রতিনিয়ত প্রসারণশীল বাষ্পের কারণে বুদবুদের সৃষ্টি হয় যা চিপস ও ফ্রাইড চিকেনের উপরে সুস্বাদু মচমচে আবরণ তৈরি করে।শুধু খাবার গ্রহনের ক্ষেত্রে নয়, শব্দও এখানে বড় ভূমিকা পালন করে।আই জি নোবেল প্রাইজের একটি রিসাচ অনুসারে, রিসারচে অংশগ্রহণকারী যে সকল ব্যাক্তিদের “প্রিঙ্গেলস” এর পটেটো চিপস খাবার সময় হে্ডফোনে “ক্রাঞ্চ” এর আওয়াজ শোনানো হয়েছে তারা সে সকল চিপসকে ফ্রেশ হিসেবে মনে করেছে আর যারা শুধু চিপস খেয়েছে তাদের কাছে চিপস ফ্রেশ মনে হয়নি।

পরিত্রানের উপায় আছে কি!
• প্রতিদিন খাদ্যে তালিকায় খাদ্যের ৬ টি উপাদান বিদ্যমান রাখতে হবে।
• সপ্তাহে এক দিনের জন্য খাদ্য তালিকা সম্পূর্ণ নিরামিষ রাখা যেতে পারে।
• মওসুমই ফল গ্রহণ করতে হবে।
• খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ তেল ব্যাবহার করা যেতে পারে।
• দুধ জাতীয় খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে কম ফ্যাট যুক্ত দুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
• ডুবো তেলে ভাজা খাবার গ্রহণ করা যাবে না।

ফ্যাট শরীরের প্রয়োজনীয় উপদান, এটি বাদ দিয়ে শরীর গঠন ব্যাহত হবে। তাই সঠিক ফ্যাট গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের চাহিদা পূরণ এবং খারাপ ফ্যাট বর্জনের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


Source: pushtibarta