Author Topic: বেলের পুষ্টিগুন  (Read 187 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

LamiyaJannat

  • Guest
বেলের পুষ্টিগুন
« on: March 08, 2020, 02:50:05 PM »
বেল আমাদের দেশে শরবত এবং মোরব্বা হিসাবে খাওয়া হয়।বেলে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে শর্করা এবং আমিষ, এছাড়াও এতে রয়েছে রিবোফ্ল্যাভিন,থায়ামিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ক্যারোটিন, ফসফরাস,  আয়রন বা লৌহ এবং ক্যালসিয়াম। শুকনো বেলে খনিজ লবণ এবং ভিটামিনের ঘণত্ব বেড়ে যায়।
 
বেল আমাদের দেশে বিভিন্ন রোগের ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হ্য়,বেলের কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা নিম্নে দেওয়া হলঃ

১। পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রেঃ পাকা বেল হজম সহায়ক, এটি পরিষ্কারক হিসাবে কাজ করে এবং পরিপাকতন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বেলের নির্যাস আইবিএস(IBS, Irregular or Irritable Bowel Syndrome) আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারী। বেলের মূলের পেষ্ট বা বাটা পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতায় ব্যবহার করা হয়।

২। ডায়ারিয়া ও আমাশয়ের ক্ষেত্রেঃ বেলে ডায়ারিয়া প্রতিরোধক উপাদান রয়েছে।কাঁচা বেল ডায়ারিয়া ও আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। বেলকে টুকরো করে, শুকিয়ে এবং পাউডার বা গুঁড়া করে সংরক্ষণ করা যায় যা পরবর্তীতে আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। বেলের গুঁড়ার সাথে মধু, গুড় বা মাখন মিশিয়ে ডায়ারিয়ার ভেষজ চিকিৎসায় করা হয়। বেলের অ্যান্টি- ব্যাক্টিরিয়াল বৈশিষ্টের জন্য ব্যাক্টেরিয়া জনিত ডায়ারিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে বেল।

৩। পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রেঃ  বেলের পাতায় রয়েছে ট্যানিন যা প্রহাহ কমায়, আলসারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করে। বেলে রয়েছে মিউসিলেজ এবং আঁশ যা পাকস্থলির অভ্যন্তরীণ আবরণকে রক্ষা করে, আলসার থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করে ।

৪। অ্যান্টি মাইকোবায়াল বা অনুজীবকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতাঃ গবেষণায় দেখা গেছে, বেলের পাতা থেকে যে তেল উৎপাদন করা হয়, তার ছত্রাক প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে।যা ছত্রাকের অঙ্কুরোদগমের বৃদ্ধি এবং এদের দৈহিক বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। এটি ডায়ারিয়া, টাইফয়েড এবং অন্যান্য রোগের ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

৫।প্রদাহ প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যঃ কাঁচা বেলে প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ প্রতিরোধক ক্ষমতা রয়েছে,যা বিভিন্ন টিস্যুতে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বেল খেলে আর্থ্রাইটিস এবং বাতের ব্যাথা কমে। বেলের আঁশ এবং গরম সরিষার তেল সাধারণণত আর্থ্রাইটিস এবং হাড়ের ফুলে যাওয়া  অংশে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।

৬। রক্তচাপ কমাতে  সাহায্য করেঃ বেলের পাতায় ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট’ রয়েছে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। বেল পাতায় রসের সাথে মধু মিশিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে রক্তচাপ কমানো যায়।

৭।শ্বসনতন্ত্রের জটিলতার ক্ষেত্রেঃ বেলের প্রদাহ প্রতিরোধী ক্ষমতা এবং অনুজীব প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যের জন্য শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতায় ব্যবহার করা হয়। বেলের পাতার শরবত বা চা ঘরোয়া ভাবে ঠান্ডা, কাশি, শ্বাস কষ্টের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। বেলের পাতা সরিষার তেলের মধ্যে কালো গোলমরিচ, জিরা দিয়ে গরম করে, মাথার তালুতে মালিশ বা ম্যাসাজ করলে শরীর ঠান্ডা বা কাশিতে সহজে আক্রান্ত হয় না।

৮।ক্যান্সার চিকিৎসায় বেলঃ গবেষনায় দেখা গেছে, বেলের পাতা এবং অন্যান্য অংশ, নির্্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান হিসেবে কাজ করে। গবেষনায় আরো দেখা গেছে যে, বেলের নির্্যাস ক্যান্সার এবং টিউমার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে।

৯। থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রন করার ক্ষেত্রেঃ থাইরয়েড হরমোন আমাদের দেহে গুরুরবপূর্ণ বিপাকীয় কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।গবেষনায় দেখা গেছে, বেলের  পাতা সিরামে T3(ট্রাই আয়োডো থাইরোনিন) এর মাত্রা কমায়।যা প্রধানত হাইপার-থাইরিডিজমের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। বেলের পাতা কিভাবে থাইরয়েড হরমোনকে নিয়ন্ত্রন করে তা নিয়ে এখনও গবেষনা করা হচ্ছে।

১০।হৃদপিন্ডের জন্য উপকারি বেলঃ যেসকল গাছকে ঔষধি গুণাবলীতে পরিপূর্ণ বলে মনে করা হয়, বেল তাদের মধ্যে অন্যতম।বেলকে বলা হয় ‘Heart Tonic’ বা ‘হৃদপিন্ডের ঔষধ’। বেলের শরবত বা ফল হিসেবে খেলে হৃদপিন্ড ভাল থাকে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায় কারন বেলে আঁশ পরিপাক নালীতে কোলেস্টেরল শোষনে বাধা দেয়। বেল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং টিস্যুর লিপিড নিয়ন্ত্রন করে।

১১।ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রেঃ বিভিন্ন ভেষজ চিকিৎসায় ‘বেল’কে ডায়াবেটিসের ঔষধ বলা হয়। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে, বেলের নির্্যাস বা রস, হাইপো-গ্লাইসেমিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সরাসরি ইনসুলিন উত্তেজিত করার মাধ্যমে শরীরে গ্লুকোজের উপযোগীতা বাড়িয়ে, বেল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়।

১২। শরীরকে সতেজ রাখার ক্ষেত্রেঃ বেলের শরবত বা মোরব্বা শরীরকে শীতল রাখে।অতিরিক্ত গরমে ব্রণ এবং মুখের আলসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেলের শরবত শরীরের তাপ কমায় এবং তৃষ্ণা মেটায়। বেলের  শরবত অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি এবং  বুকের জ্বালা-পোড়া ভাব কমায়। যাকে গরমের আদর্শ পানীয় বলা যায়।বেলের মোরব্বা অতিরিক্ত গরমে ‘হিট স্ট্রোক’ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।বেলের পাতা ‘ইউরিন ইনফেকশন’ ক্ষেত্রে ঔষধ হিসাবে কাজ করে।

১৩।বেল যকৃতের বন্ধুঃ বলা হয় বেল নাকি যকৃতের বন্ধু,বেলে রয়েছে ‘hepato-protective’ বা যকৃত কোষকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো ক্ষমতা, যা যকৃতের ক্ষত,লিভার সিরোসিস(সাধারণত অতিরিক্ত মদ্যপান করলে ঘটে থাকে) থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়াও যকৃতের অনুজী্বের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।বেলের শরবত বা বেলকে যকৃতের টনিক হিসেবে ধরা হয়।

১৪। ত্বকের জন্য উপকারী বেলঃ বেলের পাতার তেল  ত্বকের জন্য উপকারী এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।বেলের জুস ত্বকের সংক্রামক এবং অ্যালার্জী থেকে রক্ষা করে। বেলে এস্ট্রিজেন্ট (Astringent) এবং অনুজীব প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকায় এটি ত্বকের জন্য স্বাস্থ্যকর। লিউকোডার্মা বা ভিটিলিগো ত্বকের সাদা ছোপ ছোপ দাগ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।যা ‘মেলাটোনিন’ নামক হরমোনের অভাবে বা কখনও ত্বকের কিছু অংশে এই হরমোন বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষমতা হারায়।‘ভিটিলিগো’র চিকিৎসায় বেল ব্যবহার করা হয়।বেলের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা ত্বকের রংকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।গবেষনায় দেখা গেছে, বেলের আঁশ এবং ক্যারোটিনের সাথে ‘সোয়ালিন(Psoalen)’ নামক উপাদান রয়েছে যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙ বজায় রাখতে সাহায্য করে।বেল খেলে ‘লিউকোডার্মা’ থেকে সেরে উঠা যায় এবং ত্বকের স্বাভাবিক রঙও ফিরে পাওয়া যাবে।




Source: pushtibarta