Author Topic: কিটো ডায়েট – বন্ধু না শত্রু?  (Read 303 times)

0 Members and 2 Guests are viewing this topic.

LamiyaJannat

  • Guest
আজকাল অনেক মানুষ ওজন কমানোর জন্য নানারকম ডায়েট অনুসরণ করেন। এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটির নাম কিটো ডায়েট।যা লো কার্ব (Low Carb) বা হাই ফ্যাট(High Fat) ডায়েট নামেও পরিচিত। কেননা খাদ্যতালিকা থেকে শর্করাজাতীয় খাদ্য যেমন- ভাত,  রুটি, আলু ইত্যাদি কমিয়ে স্নেহ এবং প্রোটিনজাতীয় খাদ্য যেমন- উদ্ভিজ্জ তেল, মাছ, মাংস, পনির ইত্যাদি যোগ করে বা পরিমাণে বাড়িয়ে এই ডায়েট প্রস্তুত করা হয়। যদিও অন্যান্য লো ক্র্যাব ডায়েট, যেগুলো মূলত প্রোটিনের উপর নির্ভরশীল, তাদের তুলনায় কিটোজেনিক ডায়েট বেশ ভিন্ন। এই ডায়েটে মূল আকর্ষণ ফ্যাটের আধিপত্য, যা থেকে ৯০ শতাংশ শক্তি পাওয়া যায়।  হতে পারে, এই ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকাতে দ্রুত ওজন হ্রাস পায় বিধায় অনেকে এটি অনুসরণ করে এবং ইন্টারনেটে এর প্রচার- প্রসার তুঙ্গে । কিন্তু স্মরণ রাখা উচিত এটি এমন ধরণের ডায়েট নয় যা পরীক্ষামূলকভাবে ওজন কমানোর উদ্দেশে নিজের উপর প্রয়োগ করা যায়। আসুন জেনে নেই কিটো ডায়েটের ভালো-মন্দ, সবদিক।

কীভাবে কাজ করে কিটো ডায়েটঃ

শর্করাজাতীয় খাদ্য পরিহার করার ফলে দেহ তার শক্তির মূল উৎস গ্লুকোজ পায় না। যার ফলে দেহ সঞ্চিত চর্বি খরচ করে শক্তি উৎপাদন করে। ফলে দেহের সঞ্চিত চর্বি কমে যায় এবং ওজন হ্রাস পায়।

কিটো ডায়েটের ফলাফলঃ

আমাদের মস্তিষ্ক শুধুমাত্র গ্লুকোজ থেকেই শক্তি পায়। কিটো ডায়েট পালনের প্রথম পর্যায় খাদ্য থেকে গ্লুকোজ না পেয়ে মস্তিষ্ক যকৃত এবং মাংসপেশির সঞ্চিত গ্লুকোজ আহরণ করে। ৩-৪ দিনের মধ্যে সঞ্চিত গ্লুকোজ শেষ হয়ে গেলে ইনসুলিন লেভেল কমে যায়। দেহ সম্পূর্ণরূপে চর্বির উপর নির্ভর হয়ে পরে। যকৃত চর্বি থেকে কিটোন বডি উৎপাদন করতে থাকে যা গ্লুকোজের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়।

উপকারিতাঃ
   স্বল্পমেয়াদে কিটো ডায়েট পালনে দেহের সঞ্চিত চর্বি হ্রাস পায়।
   স্নেহজাতীয় খাদ্য অতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্যগ্রহণের ইচ্ছা (ফুড ক্রেভিং) কমায়।
   শর্করাজাতীয় খাদ্যের পরিমাণ কমানোয় ক্ষুধাবর্ধক হরমোন কম নিঃসরিত হয়।
   দেহের ক্যালরি চাহিদা বেড়ে যায়।

জটিলতাঃ
   দীর্ঘমেয়াদি কিটো ডায়েটের ফলে কিটোন বডির পরিমাণ অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে গেলে কিটোএসিডোসিস হতে পারে, যা মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়।
   এর ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
   দীর্ঘমেয়াদি কিটো ডায়েট পালন অস্টিওপোরসিস বা হাড়ক্ষয়ের কারণ হতে পারে।
   এর ফলে রক্তে ইউরিক এসিডও বাড়তে পারে যা বাতের সূচনা করে।
   সঠিক নিয়মে কিটো ডায়েট পালন করতে না পারলে নানারকম পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত রোগ দেখা দিতে পারে।
   শুধুমাত্র চর্বিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
   অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিনজাতীয় খাবার গ্রহণ করলেও তা বিপাকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
   কারো যকৃতে সমস্যা থাকলে সমস্যার অবনতি ঘটে।
   কিটো ডায়েটে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
   অনেকে ক্ষুধা, ক্লান্তি, মাথাব্যাথা, খিটখিটে মেজাজ, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়াসহ আরো নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।

কিটো ডায়েট কি মানবো নাকি মানবো না?
এপিলিপটিক সিজার, (epileptic seizure)  এক ধরণের খিঁচুনি, এটিতে বাচ্চারা আক্রান্ত হলে তাদের কিটো ডায়েট দেয়া হয়। তাতে খিঁচুনির হার হ্রাস পায়। প্রয়োগ হতে বোঝা যাচ্ছে বর্তমানে কিটো ডায়েট দ্বারা ওজন কমানোর যে প্রচলন শুরু হয়েছে তার সাথে বাস্তবিক ক্লিনিকাল প্রয়োগের কোনো সামঞ্জস্য নেই। যদিও দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে কিটো ডায়েট কার্যকরী এবং অনেক ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদ ব্যাক্তি বিশেষের অবস্থার কথা বিবেচনা করে এই ডায়েট অনুসরন করতে বলে থাকে । তবে সঠিক পদ্ধতিতে মানতে না পারলে এটি সৃষ্টি করতে পারে নানারকম দৈহিক সমস্যা। কেননা গবেষকরা এখন বলতে পারছেন নাহ কি পরিমাণ সময় এই ডায়েট অনুসরণ করা নিরাপদ। এজন্য কোনো ডায়েট অনুসরণ করার আগে জেনে নেওয়া উচিত এর আদ্যপান্ত, নিজ শারিরিক-মানসিক অবস্থা এবং ডায়েট করার উদ্দেশ্য । তাই কিটো  ডায়েট মানতে চাইলে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

source: পুষ্টি বার্তা