Author Topic: হেড ইনজুরি | মাথায় আঘাত লাগলে করণীয় কী?  (Read 379 times)

0 Members and 1 Guest are viewing this topic.

LamiyaJannat

  • Guest
হেড ইনজুরি মাথার ত্বক, খুলি বা মস্তিষ্কে যে কোন আঘাতকে বুঝায়। এই আঘাতে মাথার খুলি সামান্য ফুলে যেতে পারে কিংবা মারাত্বক ব্রেইন ইনজুরি হতে পারে। হেড ইনজুরি ওপেন কিংবা ক্লোজড হতে পারে। ক্লোজড হেড ইনজুরি হচ্ছে আপনার মাথায় কিছুর আঘাত পেলেন, কিন্তু বস্তুটি মাথার খুলিকে ভাঙে নি। আর ওপেন হেড ইনজুরি হলো মাথায় কোনও বস্তুর আঘাতের ফলে মাথার খুলি ভেঙে যাওয়া। বস্তুটি মাথার খুলি ভেঙে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে।
চলুন তবে জেনে নেই হেড ইনজুরি নিয়ে বিস্তারিত!

কী ধরনের হেড ইনজুরি হতে পারে?


•   কনকাশন (concussion)– এর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে ঝাকি লাগে। আঘাতজনিত মস্তিষ্কের ইনজুরিতে এটি খুব সাধারণ ধরন।
•   মাথার ত্বক কেটে যাওয়া।
•   মাথার খুলি ফেটে যাওয়া।

হেড ইনজুরির ফলে কোথায় রক্তপাত হয়?

•   হেড ইনজুরির ফলে মস্তিষ্কের টিস্যুতে রক্তপাত হতে পারে।
•   মস্তিষ্কের চারপাশের স্তরগুলোতে (সাব এরাকনয়েড হেওরেজ, সাব ডুরাল হেমাটোমা, এক্সট্রা ডুরাল হেমাটোমা) রক্তপাত হতে পারে।

হেড ইনজুরির কারণ


হেড ইনজুরির সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে-
•   বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে, বাড়ির বাইরে কিংবা খেলাধুলা করার সময় দুর্ঘটনা।
•   পড়ে যাওয়া।
•   শারীরিক আঘাত।
•   সড়ক দুর্ঘটনা
বেশীরভাগ আঘাত গুরুতর নয়। কারণ খুলি মস্তিস্ককে রক্ষা করে। আবার কিছু ইনজুরি এতটা ভয়াবহ হয় যে রোগীকে হাসপাতালে রাখার প্রয়োজন হয়।

হেড ইনজুরির উপসর্গ বা লক্ষণ

হেড ইনজুরির কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। মাথায় আঘাত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হেড ইনজুরির উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার ধীরে ধীরে কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে উপসর্গগুলো দেখা দিতে। মাথার খুলি ভেঙ্গে না গেলেও মস্তিষ্ক খুলির মধ্যে আঘাত পেতে পারে। মাথা দেখতে স্বাভাবিক লাগে, কিন্তু ভেতরে রক্তপাত হলে কিংবা ফুলে গেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কোনও মারাত্বক আঘাতে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হতে পারে। কিছু হেড ইনজুরিতে মস্তিষ্কের কাজ পরিবর্তিত হতে পারে। একে বলে ট্রমাটিক হেড ইনজুরি (traumatic head injury)। এই ইনজুরির কিছু কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন-

•   হটাৎ প্রচন্ড মাথাব্যথা।
•   ডাবল ভিশন বা সব কিছু জোড়া জোড়া দেখা।
•   চোখের পাতা ঢুলে পড়া।
•   শরীর বা মুখের এক পাশ অবশ হয়ে যাওয়া।
•   বমি হতে পারে।
•   নাক ও কান দিয়ে রক্ত আসতে পারে।
•   দুই চোখের চারিদিকে কালো হয়ে যেতে পারে।
•   খিঁচুনি হতে পারে।
•   কথা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা অসংলগ্ন কথা বলতে পারে।

হেড ইনজুরি হলে প্রাথমিকভাবে করনীয়

মাথায় আঘাত পাওয়া যে কোন রুগীর ক্ষেত্রেই সবার প্রথমে দেখতে হবে রুগী শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে কিনা ঠিকমত। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক না থাকে সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে নাকে মুখে কোন বাধা আছে কিনা, থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হওয়ার জন্য দরকার হলে কৃত্রিমভাবে মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস দেওয়া যেতে পারে। মাথায় আঘাত পাওয়া রুগীর সঙ্গে অন্য আঘাতও থাকতে পারে। যেমন- তাঁর ঘাড়ে সারভাইকাল ইনজুরি থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁর নড়াচড়া হতে হবে খুবই সীমিত। কারণ, যদি বেশি টানাটানি করা হয় তাহলে হয়তো ঘাড়ে আঘাত পেয়ে যেতে পারে।
সেই অবস্থায় তাকে আস্তে করে তুলে কাছের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। রক্তক্ষরণ থাকলে তা বন্ধ করতে হবে। বড় ধরনের কাটা থাকলে সেলাই করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে সিটি স্ক্যান করে দেখতে হবে মস্তিষ্কের ভেতরে কোন রক্তক্ষরন হয়েছে কিনা।

কখন হাসপাতালে নিয়ে যাবেন?


•   যদি রুগীর খুব ঘুম আসে।
•   যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে।
•   যদি মারাত্বক মাথাব্যথা হয় কিংবা ঘাড় শক্ত হয়ে যায়।
•   যদি দুই চোখের মনি দুই রকম হয়ে যায়।
•   যদি রুগীর হাত বা পা শক্ত হয়ে যায়।
•   জ্ঞান হারিয়ে ফেললে।
•   একবারের বেশি বমি হলে।
•   যদি রুগীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ঠিক থাকে কিন্তু রুগী অজ্ঞান থাকে তাহলে বুঝতে হবে তাঁর স্পাইনাল ইনজুরি হয়েছে।

মাথায় আঘাত লাগলে যা করবেন


•   রুগীর মাথা ও ঘাড়ের নিচে হাত রেখে সাপোর্ট দিন যাতে নাড়াচাড়া না হয়।
•   ক্ষত থেকে কোন রক্তপাত হলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ক্ষত চেপে ধরুন।
•   যদি রুগী বমি করে, তাহলে বমি যাতে শ্বাস পথে না যায়, সে জন্য রুগীর মাথা, ঘাড় ও শরীর একপাশে কাত করে দেবেন।
•   শিশুদের মাথায় আঘাত পেলে সচরাচর একবার বমি করে। এটি তেমন কোন সমস্যা নয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসককে অবহিত করুন।
•   ফোলা জায়গায় বরফ সেঁক দিতে পারেন।

হেড ইনজুরিতে যা করবেন না


•   আঘাত মারাত্বক হলে রুগীর মাথা নাড়াচাড়া করবেন না।
•   যদি ক্ষতস্থানে চেপে ধরা কাপড় রক্তে ভিজে যায় তাহলে সেটিকে সরিয়ে ফেলবেন না। এর উপর আরেকটি কাপড় দিয়ে রাখুন।
•   যদি মনে হয় খুলি ভেঙ্গে গেছে তাহলে সেখানে সরাসরি চাপ দেবেন না।
•   ক্ষত থেকে কোন মরা টিস্যু সরাবেন না।
•   মাথার ক্ষত গভীর হলে বা অধিক রক্তপাত হলে মাথা পরিষ্কার করবেন না।
•   প্রয়োজন ছাড়া রুগীকে নাড়াচাড়া করবেন না বা ঝাঁকি দেবেন না।