মানুষের শরীর এমন যন্ত্র সদৃশ যাতে প্রত্যেকটি অঙ্গই খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। এর মধ্যে একটি বিকল হয়ে পড়লে আরেকটি যেন ছন্দ হারায়। লিভার বা যকৃত মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। লিভারের সমস্যা আজকাল কম বেশি যে কোন বয়সের মানুষের মুখেই শোনা যায়। কারো লিভার বড় হয়ে যাওয়া, তো কারোর লিভারে চর্বি জমা বা ফ্যাটি লিভার। রোগীর অবস্থা আরেকটু খারাপ হলে লিভার সিরোসিস এর নাম শোনা যায়। আজকে জানবো ফ্যাটি লিভার ও এর ডায়েট নিয়ে।
ফ্যাটি লিভার ও এর ডায়েটফ্যাটি লিভার কি?লিভার বা যকৃতে যখন বেশি পরিমাণে ফ্যাট বা চর্বি জমে লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে তখন তাকে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলে। অতিরিক্ত ফ্যাট অনেক সময় লিভার ফেইলিয়ার (Liver Failure) এরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কারণপ্রধানত নিচের কারণগুলোর জন্যই লিভারে ফ্যাট জমতে দেখা যায়।
• স্থূলতা
• রক্তে সুগারের পরিমাণ বেশি থাকা
• রক্তে ফ্যাট বিশেষ করে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকা
লক্ষণ • ক্ষুধামন্দা
• ওজন কমে যাওয়া
• দুর্বলতা
• অবসাদ
• চুলকানি
• চোখ ও চামড়ার রং হলুদ হয়ে যাওয়া
• পেটে ব্যথা
• পেটে পানি জমা
• পা ফুলে যাওয়া
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ মূলত ২ ধরনের হয়ে থাকে।
১. অ্যালকোহলিক অর্থাৎ অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে।
২. নন-অ্যালকোহলিক অর্থাৎ অ্যালকোহল বাদে অন্য কোন কারণে।
আমেরিকার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এই রোগে আক্রান্ত এবং এটি লিভার ফেইলিয়ার (Liver Failure) এর অন্যতম বড় একটি কারণ। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার প্রধানত যারা স্থূল এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস বা Processed meat বেশি খায় তাদের মধ্যে লক্ষ্যণীয়। এই অসুখ কমানোর অন্যতম একটি বড় দাওয়াই হলো ডায়েট। একটি সুস্থ শরীরে লিভার বা যকৃত শরীরের বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করে, পিত্তরস তৈরী করে। ফ্যাটি লিভার ডিজিজ লিভারের সেই কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
সহজ ভাষায় ফ্যাটি লিভার ডায়েট মানে• প্রচুর ফল ও সবজি
• ফাইবার বা খাদ্য আঁশ সমৃদ্ধ সবজি ও শস্য
• খুব কম পরিমাণে চিনি, লবণ, রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা এবং সম্পৃক্ত ফ্যাট গ্রহণ
• অ্যালকোহল বর্জন করা
• লো ফ্যাট, লো ক্যালরি ডায়েট ফ্যাটি লিভার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়
এখন কয়েকটি খাবার নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো ফ্যাটি লিভারের জন্য ভালো
১। সবুজ শাক-সবজি এর মধ্যে ব্রোকলি সবচেয়ে ভাল। এটি লিভারে ফ্যাট জমতে বাধা দেয়। এছাড়া, পালংশাক, কচুশাক, বিদেশি সবজি ব্রাসেল স্প্রাউট এগুলোও উপকারী ভূমিকা পালন করে।
২। সয়াবিনইঁদুরের উপর করা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সয়াবিন থেকে তৈরি টফু লিভারের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। টফু একটি লো ফ্যাট ও হাইপ্রোটিন খাবার।
৩। সামুদ্রিক মাছসামুদ্রিক মাছে যেমন টুনা, সারডিন ইত্যাদিতে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা লিভারের ফ্যাট জমতে দেয় না।
৪। ওটসশস্যদানা থেকে বানানো শর্করা জাতীয় খাবার ওটস শরীরের সুগার যেমন নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফ্যাট জমতে দেয় না। পাশাপাশি ওজনও বাড়তে দেয় না।
৫। লো ফ্যাট দুধ ও দুধের তৈরী খাবারলো ফ্যাট দুধ ও দুধের তৈরী খাবার লিভারের ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে।
৬। রসুনহার্ব জাতীয় এই উদ্ভিদ খাবারের শুধু Flavor এর জন্যই না, এক্সপেরিমেন্টাল স্টাডিগুলো থেকে পাওয়া যায় যে, রসুনের গুঁড়া বা পাউডার শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে।
৭। গ্রীন টিএই উপকারী চা লিভারে ফ্যাট জমতে দেয় না এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৮। অ্যাভোক্যাডোঅ্যাভোক্যাডোতে উপস্থিত কেমিক্যাল লিভার ড্যামেজ প্রতিরোধ করে। যেহেতু এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে তাই এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
কোনগুলো বাদ দিবেন?(১) অ্যালকোহল
এটি ফ্যাটি লিভার এবং অন্যান্য লিভার সমস্যার অন্যতম প্রধান একটি কারণ।
(২) মিষ্টি জাতীয় খাবার
অতিরিক্ত মিষ্টি দিয়ে বানানো বিস্কুট, চকোলেট, ফ্রুট জুস খুব তাড়াতাড়ি ওজন বাড়ায় এবং লিভারে ফ্যাট জমায়।
(৩) তেলে ভাঁজা খাবার
তেলে ভাঁজা খাবারগুলো হাই ফ্যাট ও হাই ক্যালরির হয়ে থাকে।
(৪) অতিরিক্ত লবণ
অতিরিক্ত লবণ দেহে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে, ফলে শরীরে পানি জমে যাওয়া শুরু করে।
(৫) লাল মাংস
গরু ও খাসির মাংস, চর্বি শরীরের কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং লিভারে ফ্যাট জমায়।
কেমন হতে পারে ফ্যাটি লিভার ডায়েটের ধরণ? সকালে• রুটি – ২টি ( লাল আটার হলে বেশি ভাল)
• সবজি ( আলু কম থাকতে হবে)- ১ বাটি
• ডিম (সিদ্ধ- কুসুম ছাড়া) – ১টি
সকাল ১১টা• আপেল- অর্ধেকটা
• মাল্টা- অর্ধেকটা
দুপুর• ভাত- ১ কাপ
• ডাল- ১ কাপ
• শাক-সবজি- ১ কাপ
• মাছ/ মাংস (মুরগী- ঝোল ছাড়া)- ২ টুকরা (মাঝারী মাপের)
• সালাদ
রাতে• ওটসের সাথে মাছ বা মাংসের টুকরা খেতে পারেন অথবা কর্নফ্লেক্স
ঘুমানোর আগে• লো ফ্যাট দুধ বা টক দই
পরামর্শ• নিয়ন্ত্রিত খাবারের সাথে সাথে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
• ব্লাড সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।
• ডায়াবেটিস এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজ একসাথে হতে পারে, কাজেই এ ব্যাপারে সবসময় সজাগ থাকতে হবে।