Newtec Pharma & Research Center

Human Health Care => Neurology => Topic started by: LamiyaJannat on July 20, 2019, 11:09:28 AM

Title: অটিজম – একটি নিউরাল ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার
Post by: LamiyaJannat on July 20, 2019, 11:09:28 AM
অটিজম শিশুদের এক ধরনের স্নায়বিক উন্নয়ন জনিত সমস্যা। এর ফলে সে সামাজিক কার্যকলাপে বাধাগ্রস্ত হয় , অন্য ব্যাক্তিদের সাথে মুখে ও আকার ইঙ্গিতে যোগাযোগে সমস্যার মুখোমুখি হয়। এক কাজই বার বার করতে থাকার প্রবণতা দেখা যায়। লক্ষণসমূহ সাধারণত ছয় মাসের পর থেকে শুরু হয় এবং ২ বছরের মাথায় সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ পায়। বাচ্চাটির বয়স তিন বছর হওয়ার আগেই এসব লক্ষণ দেখা দিলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে বাচ্চাটি অটিস্টিক। অটিজম নার্ভ সেল গুলোর মধ্যকার সংযোজন পরিবর্তনের মাধ্যমে মস্তিস্কে তথ্য প্রক্রিয়াজাতে বাঁধা দেয়।
অটিজমের কারণঃ
১. অটিজম এর পেছনে জেনেটিক পরিবর্তন দায়ী হতে পারে। হতে পারে তা মিউটেশন অথবা কিছু সাধারণ জেনেটিক পরিবর্তক।
২. বিরল ক্ষেত্রে, জন্ম ত্রুটি সৃষ্টিকারী ফ্যাক্টর গুলোর কারণেও অটিজম হতে পারে।
৩. কিছু পরিবেশগত কারণ যেমন -ভারী ধাতু, পেস্টিসাইড, শিশুদের ভ্যাক্সিন জনিত কারণেও হতে পারে। কিন্তু এসব ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের দ্বিমত আছে।
৪. গবেষণায় দেখা গিয়েছে যমজ শিশুদের শতকরা ০.৭ ভাগের অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি ভাই বোনদের একজনের অটিজম হলে আরেক জনের হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ ভাগ।
পরিসংখ্যানঃ
বিশ্বের প্রতি ১০০০ জন মানুষের মধ্যে ১-২ জন মানুষ অটিজমে আক্রান্ত। মেয়েদের থেকে ছেলেদের অটিজম প্রায় চার গুণ বেশি। ৮০র দশকের পর থেকে রোগ নির্ণয় উন্নয়নের কারণেই হোক আর যে কারণেই হোক রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
কীভাবে রোগটি নির্ণয় করা যাবে ?
কারণ বা হওয়ার প্রক্রিয়া দিয়ে অটিজম নির্ণয় করা যায় না। শুধুমাত্র শিশুর ব্যবহার দেখে বোঝা যাবে। সর্বমোট ৬ টি লক্ষণ দেখে অটিজম নির্ণয় করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ সামাজিকতায় সমস্যা, মুখে ও আকার ইঙ্গিতে ভাব বিনিময়ে সমস্যা, কোন সহজ কাজ করতে না পারা আর একই কাজ বার বার করা। যেমন- একই জিনিসপত্র বার বার গোছাতে থাকা ( লাইন ধরে দাড় করাতে থাকে) বা একই কথা বার বার বলা। একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বাচ্চার শারীরিক গঠন পরীক্ষা করে এবং তার বেড়ে ওঠার ইতিহাস জেনে সিদ্ধান্তে আসেন। এক এক সময়ে একেকটি শিশুর মানসিক উন্নয়নের কিছু মানদণ্ড আছে যা দেখে ধারনা করা যায় শিশুটি স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক।
অটিস্টিক শিশুর যত্নঃ
এখন কথা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে। হ্যাঁ, কীভাবে অটিস্টিক শিশুর খেয়াল রাখতে হবে। এমন শিশুদের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো তাদের পরিবার এবং তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করার চেষ্টা করা। তাদের কাজ কর্মে স্বনির্ভর করে তোলা এবং জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা। পরিবার এবং শিক্ষা ব্যাবস্থা তাদের চিকিৎসার উৎস।
বিশেষ শিক্ষা ব্যাবস্থা, ব্যবহার থেরাপি দিলে শিশুর জীবনের শুরু থেকেই নিজের যত্ন করতে শিখবে, কাজের দক্ষতা বাড়বে। অটিজম হওয়া মানে এই নয় যে শিশুটি কোনো কাজের নয়। এসব শিশুদের কিছু কাজে অসাধারণ প্রতিভা থাকে। এটা সৃষ্টিকর্তার লীলাই ভাবুন আর যাই ভাবুন। তাদের বিভিন্ন ভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে ঠিক কী কাজে সে আগ্রহ অনুভব করে?
কাঠামো বদ্ধ শিক্ষা, ভাষা শিক্ষা, আচরণগত গবেষণার মাধ্যমে তার চিন্তাধারাকে উন্নত করতে হবে। কথা বলানোর অভ্যাস করাতে হবে। মানুষের সামনে এনে পরিচয় করাতে হবে। অন্যান্য শিশুর মত তাকেও বোঝাতে হবে তাকে আপনি তাকে কতটা ভালোবাসেন। টুকটাক কাজ যেমন, জুতার ফিতা বাঁধা, চুল আঁচড়ানো, কাপড় পরার ক্ষেত্রে তাকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। তার ভালো কাজ গুলোর প্রশংসা করতে থাকুন।
বাংলাদেশ ও অটিজমঃ
বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি অনেক সংস্থা অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে “প্রয়াস”, সোশ্যাল অয়েলফেয়ার সোসাইটি অফ বাংলাদেশ, অটিস্টিক শিশু ফাউন্ডেশন, এডভান্সড স্কুল ফর স্পেশাল চিলড্রেন উল্লেখযোগ্য। তারা শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবহার গত উন্নয়নেও সাহায্য করে থাকে। অটিস্টিক শিশুরা সমাজের অংশ। আপনার শিশুটিরও এমন হতে পারে। কোন লক্ষণ দেখা গেলে দেরি না করে শিশু বিশেষজ্ঞ কে জানান। তাকে ভালোবাসুন, বোঝার চেষ্টা করুন। অনেক পিতা অটিস্টিক বাচ্চা হলে এই নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে। যদিও এটি কোন অক্ষমতার পরিচায়ক নয়। যে কারো অটিস্টিক শিশু হতে পারে। কাজেই অন্য কারো সন্তান কে নিয়েও হাসি ঠাট্টা করা উচিত নয়। আমাদের মন মানসিকতার একটু পরিবর্তনই তাদের জীবনে স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দিতে পারে। কাজেই আসুন আমরা অটিস্টিক শিশু ও তার পরিবারকে স্বাভাবিক, সুস্থ চোখে দেখি।

Source: https://www.shajgoj.com/autism-reasons-and-prevention/