Newtec Pharma & Research Center

Human Health Care => Oncology (Cancer) => Topic started by: Rasel Ali on November 16, 2020, 03:24:17 PM

Title: ফুসফুসের ক্যানসার: নিশ্বাস থাকুক নিরাপদ ?
Post by: Rasel Ali on November 16, 2020, 03:24:17 PM
1.বিশ্বজুড়ে পুরুষদের ক্যানসারে মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুস ক্যানসার, আর নারীদের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় কারণ।

2.বাংলাদেশে শনাক্ত মোট ক্যানসার রোগীর প্রায় ১৬ শতাংশই ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত।

3.বিশ্বজুড়ে শনাক্ত ফুসফুস ক্যানসারের ৮০ শতাংশই ঘটে থাকে ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে।


(https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2020-11%2F443198b2-1c07-4914-92a6-1c621a6d607f%2Flung_cancer.jpg?rect=0%2C0%2C2700%2C1287&w=1140&auto=format%2Ccompress&fmt=webp)

বর্তমান বিশ্বে ক্যানসারে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ফুসফুস ক্যানসার। বিশ্বজুড়ে পুরুষদের ক্যানসারে মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুস ক্যানসার, আর নারীদের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় কারণ। বাংলাদেশে শনাক্ত মোট ক্যানসার রোগীর প্রায় ১৬ শতাংশই ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। এ ক্যানসারের উৎপত্তি সাধারণত ফুসফুসে হলেও পরবর্তী সময়ে তা লসিকাগ্রন্থি ও অন্যান্য অঙ্গে (যেমন মস্তিষ্ক) ছড়িয়ে পড়তে পারে।

(https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2020-11%2F84e8d467-5d17-441c-86b8-1edce5e52c31%2F31bd1c1b-89e3-4161-98a7-1d9ab417681b.jpg?w=700&auto=format%2Ccompress)
নিয়মিত ধূমপায়ীদের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্মল সেল ক্যানসার দেখা যায়। প্রতীকী ছবিছবি: সংগৃহীত

সচরাচর দুই ধরনের ফুসফুস ক্যানসারের দেখা পাওয়া যায়। নিয়মিত ধূমপায়ীদের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্মল সেল ক্যানসার দেখা যায়। ফুসফুসের অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় এটি বেশি মারাত্মক এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুত শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আরেক ধরনের ক্যানসার হলো নন স্মল সেল ক্যানসার। নন স্মল সেল ক্যানসার আসলে কয়েক রকম ক্যানসারের সম্মিলিত নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ক্যানসারগুলো হলো স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা, এডিনোকারসিনোমা ও লার্জ সেল কারসিনোমা। এ ছাড়াও ফুসফুসের অন্যান্য ধরনের ক্যানসারের মধ্যে এডিনয়েড সিস্টিক কারসিনোমা, লিম্ফোমা, সারকোমা দেখা যায়, যা সাধারণত দুর্লভ।

যেসব কারণে বৃদ্ধি পায় ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি

(https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2020-11%2Fdc868de6-c01a-4243-9c04-413f04ed1594%2Fpexels_helen_lee_2861678.jpg?w=700&auto=format%2Ccompress)
ফুসফুস ক্যানসারের ৮০ শতাংশই ঘটে থাকে ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণেছবি: হেলেন লি, পেকজেলসপটকম

    1.বিশ্বজুড়ে শনাক্ত ফুসফুস ক্যানসারের ৮০ শতাংশই ঘটে থাকে ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ব্যক্তিও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

    2.পেশাগত বা অন্যান্য কারণে কারসিনোজেনিক (ক্যানসার উৎপন্নকারী) বস্তুর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন ফুসফুসের ক্যানসারে।

    3.শ্বাসনালির প্রদাহজনিত অন্যান্য রোগ, যেমন যক্ষ্মা, সিওপিডি, ফুসফুসে পানি আসা ইত্যাদি রোগও হতে পারে ফুসফুস ক্যানসারের কারণ।

এ ছাড়া খাদ্যাভ্যাস, পারিবারিক ইতিহাস, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ (এক্স–রে, রেডিওথেরাপি বা তেজস্ক্রিয় বস্তুর সংস্পর্শ), কলকারখানা, খনি বা গাড়ি থেকে নির্গত দূষিত বায়ু ইত্যাদি কারণ ও ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী।

ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ

    1.দীর্ঘমেয়াদি চাপা বা খুসখুসে কাশি; সময়ের সঙ্গে যার ক্রমাগত অবনতি হয়

    2.বুকে বা শ্বাসনালিতে বারবার জীবাণুর সংক্রমণ

    3.কাশি বা কফের সঙ্গে রক্তপাত

    4.শরীরের বিভিন্ন অংশ, যেমন ঘাড়ে, পিঠে, বুকে, ব্যথা হওয়া

    5.শ্বাস–প্রশ্বাস বা কাশির সময় বুকে ব্যথা বা যন্ত্রণা হওয়া

    6.দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট

    7.দীর্ঘ সময়ব্যাপী ক্লান্তি বা অবসাদবোধ; দুর্বলতা

    8.ক্ষুধামান্দ্য, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া

ফুসফুস ক্যানসার শনাক্তকরণ

ক্যানসার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে বুকে এক্স-রে করা হয়, মাইক্রোস্কোপের নিচে কফ বিশ্লেষণের মাধ্যমেও অনেক সময় ক্যানসারের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব। তবে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো বায়োপসি, যেখানে অস্বাভাবিক কোষ বা টিস্যুর পর্যবেক্ষণ বা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। প্রচলিত বায়োপসিগুলোর মধ্যে ব্রংকোস্কপি, মেডিয়াস্টিনোস্কপি, নিডল বায়োপসি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

চিকিৎসা

ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু করার আগে ক্যানসার কোন পর্যায়ে আছে, তা নির্ণয় করা হয়। নন স্মল সেল ক্যানসারের সাধারণত চারটি স্টেজ এবং স্মল সেল ক্যানসারের দুটি স্টেজ দেখা যায়। ক্যানসার এর ধরন, অবস্থান ও আকার, স্টেজ এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয়।

(https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2020-11%2F6026f45d-cc47-464c-ba44-8a7ca5e3adde%2Fpexels_anna_shvets_4225880.jpg?w=700&auto=format%2Ccompress)
রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে সাধারণত উচ্চশক্তিসম্পন্ন এক্স–রে এবং অন্যান্য তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ব্যবহার করা হয়ছবি: না ভেস, পেকজেলসপটকম

ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপি উল্লেখযোগ্য, এই তিন ব্যবস্থার সমন্বিত চিকিৎসাও করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে দিন দিন টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপির ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

টিউমারের আকার ও অবস্থান দেখে সার্জারির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে অপারেশন করে শুধুমাত্র টিউমার ও সংলগ্ন অংশ অপসারণ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পুরো ফুসফুস বা এর অংশবিশেষ অপসারণের প্রয়োজন হয়। সার্জারির পদ্ধতিগুলোর মধ্যে লোবেক্টোমি, নিউমোনেক্টোমি, লিম্ফেন্ডেনেক্টোমি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে সাধারণত উচ্চশক্তিসম্পন্ন এক্স–রে এবং অন্যান্য তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ব্যবহার করা হয়।

কেমোথেরাপি ব্যবস্থায় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়। তবে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দুর্বলতা, বমি ভাব, চুল পড়ে যাওয়া, ডায়রিয়া, মুখে ঘা ইত্যাদি দেখা যায়।

(https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2020-11%2F2c2d4a60-80a0-46e6-a27f-017169a63388%2Fpexels_elina_krima_3401354.jpg?w=700&auto=format%2Ccompress)
শিল্পকারখানা ও গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়াও ফুসফুসে ক্যানসারের জন্য দায়ীছবি: এলিনা ক্রিমা, পেকজেলসপটকম

টার্গেটেড থেরাপি প্রয়োগ করা হয় ক্যানসার কোষের সুনির্দিষ্ট মিউটেশনকে সামনে রেখে, যাতে চিকিৎসার ফলে সুস্থ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বর্তমানে EGFR, ALK, ROS-1, NTRK, MET, RET এবং BRAF V600E মিউটেশনের ফলে সৃষ্ট টিউমার রোধে FDA অনুমোদিত টার্গেটেড থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

এ ছাড়া ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়, যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে করণীয়
(https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2020-11%2F4283a06c-27b5-4062-b8a9-df6f9b4675bc%2Fpexels_pixabay_264537.jpg?w=700&auto=format%2Ccompress)
বারের তালিকায় তাজা ফলমূল ও শাকসবজি নিয়মিত রাখতে হবেছবি: পিক্সবে, পেকজেলসপটকম

ধূমপান সম্পূর্ণ পরিহার করা। এমনকি ধূমপায়ীর নিকটে অবস্থান করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। পরোক্ষ ধূমপায়ী নিজেও ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খাবারের তালিকায় তাজা ফলমূল ও শাকসবজি নিয়মিত রাখতে হবে। উচ্চ ক্যারোটিনয়েড ও সালফোরাফেনযুক্ত খাবার যেমন গাজর, কমলা, ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি, ব্রকোলি ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

শিল্পকারখানা ও গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়াও ফুসফুসে ক্যানসারের জন্য দায়ী। পরিবেশদূষণমুক্ত রাখার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।

কর্মস্থলে কারসিনোজেনিক পদার্থসমূহ (ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, অ্যাসবাস্টাস, আর্সেনিক ইত্যাদি) নিয়ে কাজ করার সময় নিজের ও কর্মীদের যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা করা। ২০১১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার City of Hope National Medical Center–এ হওয়া এক সমীক্ষায় দেখা যায়, নিয়মিত শরীরচর্চা পুরুষের ক্ষেত্রে ২০-৫০ শতাংশ এবং নারীর ক্ষেত্রে ২০-৩০ শতাংশ ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

শরীরের নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত। সুস্থ থাকা অবস্থায় ও অল্প ডোজ–বিশিষ্ট CT-Scan করানোর মাধ্যমে ক্যানসারের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

(https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2020-11%2F1cb0c1f5-ee74-490e-887e-52c5572644fd%2Fpexels_justin_l_5646004.jpg?w=700&auto=format%2Ccompress)
নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবেছবি: জাস্টিন আই, পেকজেলসপটকম

আপনার ফুসফুসের নিরাপত্তা অনেকাংশেই আপনার হাতে। সতর্কতার সঙ্গে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এই ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই এড়ানো যাবে। তবে ক্যানসারে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন।

লেখক: এমবিবিএস, এমডি (রেডিওথেরাপি), কো–অর্ডিনেটর অ্যান্ড সিনিয়র কনসালট্যান্ট-মেডিকেল অনকোলজি, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা
Source:Prothomalo