Newtec Pharma & Research Center

Human Health Care => Health Awareness => Topic started by: LamiyaJannat on September 01, 2019, 06:10:26 PM

Title: থ্যালাসেমিয়া সমস্যা সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?
Post by: LamiyaJannat on September 01, 2019, 06:10:26 PM
থ্যালাসেমিয়া কী?
অক্সিজেন- আমরা প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করি। রক্ত দেহের বিভিন্ন স্থানে এই অক্সিজেন পরিবহন করে মানবদেহের বিভিন্ন কোষসমূহকে সতেজ রাখে। রক্তের যে উপাদান অক্সিজেন পরিবহন করে, তা হচ্ছে হিমোগ্লোবিন (hemoglobin)। সুস্থ- স্বাভাবিক মানবদেহ প্রতিনিয়ত দেহের প্রয়োজনে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে তখন, যখন মানবদেহ এই হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না। থ্যালাসেমিয়া রোগীর দেহে রক্তের এই প্রোটিন উপাদানটি হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন করতে পারে না। একে এক প্রকারের অ্যানিমিয়া (anemia)-ও বলা হয়ে থাকে।

থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রকারভেদ

থ্যালাসেমিয়া সাধারণত দুই প্রকারের হয়। যেমন-
১) থ্যালাসেমিয়া মাইনর (thalassemia minor)
২) থ্যালাসেমিয়া মেজর ( thalassemia minor)

থ্যালাসেমিয়া মাইনর
থ্যালাসেমিয়া মাইনর রোগীর দেহে তাদের সমবয়সী ও সমলিঙ্গের যেকোন ব্যক্তির চেয়ে সংখ্যায় কম রক্তকণিকা উৎপন্ন হলেও তাদের কোন লক্ষণ বা জটিলতা দেখা দেয় না। তাদের জন্ম থেকেই জীবনে যতদিন বাঁচবে এভাবেই বাঁচবে। কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না এবং বেশিরভাগ থেলাসেমিয়া মাইনর  রোগী জানেনও না তাদের এই রোগ সম্পর্কে। তবে থ্যালাসেমিয়া মাইনর রোগীদের থ্যালাসেমিয়ার বাহক বলা হয়। একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি এমন কাউকে বিয়ে করেন, যিনি থ্যালাসেমিয়া বাহক নন, তাহলে তাঁদের সন্তান বড় জোর থ্যালাসেমিয়া বাহক হতে পারেন। উল্লেখ্য যে, থ্যালাসেমিয়া মাইনর কখনই থ্যালাসেমিয়া মেজরে রুপান্তরিত হয় না।

থ্যালাসেমিয়া মেজর
সন্তানের দেহে থ্যালাসেমিয়া মেজর তখনই দেখা দেয় যখন মা-বাবা দুইজনই এই রোগের বাহক হন। মা-বাবা দুইজন থেকে একটি করে দুইটি বাহক জীন সন্তানের শরীরে উপস্থিত থাকলে, সন্তানের থ্যালাসেমিয়া মেজর হবার সম্ভাবনা থাকে।

দুইজন বাহক বা থ্যালাসেমিয়া মাইনর রোগীর সন্তানদের প্রতিবার গর্ভধারণের সময় গর্ভের সন্তানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় জানা জরুরী। তা হলো-
১) ২৫% সম্ভাবনা থাকে থ্যালাসেমিয়া মেজর আক্রান্ত হবার
২)  ৫০% সম্ভাবনা থাকে থ্যালাসেমিয়া মাইনর রোগে আক্রান্ত হবার
৩) ২৫% সম্ভাবনা থাকে একেবারে সুস্থ সন্তান জন্মদানের

থ্যালাসেমিয়া সমস্যা হলে কিভাবে বুঝবেন?
শিশুর শরীরে থ্যালাসেমিয়া সমস্যা বুঝা যায় জন্মের ১-৩ বছরের মধ্যে। জন্মের পরপরই এর লক্ষণ দৃশ্যমান হয় না। দৃশ্যমান লক্ষণগুলো হলো-
১. শিশু ধীরে ধীরে দূর্বল হতে থাকে
২. অবসাদগ্রস্থ হয়ে পরে বাচ্চা। চঞ্চলতা কমে আসে।
৩. ছোট ছোট করে নিঃশ্বাস নেয় তথা শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়।
৪. মুখমন্ডল ফ্যাকাসে হয়ে যায় এবং ত্বক জন্ডিস রোগীর মত হলদে হতে থাকে।
৫. অস্বাভাবিকভাবে মুখের হাড় বিকৃত হতে থাকে
৬. তলপেটের দিকটা বাহিরের দিকে বৃদ্ধি পায়, তথা পেট ফুলে উঠে
৭. শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়
৮. প্রস্রাব গাঢ় হয়।

থ্যালাসেমিয়া সমস্যা হলে চিকিৎসা ও করণীয়
১) থ্যালাসেমিয়া মাইনর
থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা থ্যালাসেমিয়ার বাহক যারা তাঁদের কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তারা যেকোন স্বাভাবিক মানুষের মত জীবনযাপন করতে পারেন।
২) থ্যালাসেমিয়া মেজর
একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর সুস্থ মানবদেহে রক্তকণিকাগুলো ভেঙ্গে নতুন রক্তকণিকা তৈরি করে। যেহেতু থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগীর দেহে হিমোগ্লোবিন ঠিক মত তৈরি হয় না,তাই রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে যাবার পর অস্থিমজ্জার পক্ষে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করা সম্ভব হয় না। যার প্রেক্ষিতে রোগীর শরীরে নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত দিতে হয়। যেহেতু রোগীকে নিয়মিত রক্ত দিতে হয়, রোগীর দেহে আয়রনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে, তাই আয়রন নিয়ন্ত্রনের জন্য ঔষধ খেতে হয়।বাহির থেকে রক্ত নেবার কারণে রোগীর দেহে রক্তবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিরাপদ উৎস থেকে রোগীর জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে হবে।
এছাড়া, থ্যালাসেমিয়া রোগের যুগান্তকারী চিকিৎসা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (BMT-Bone Marrow Transplant)  যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং একটি সফল প্রতিস্থাপনের জন্য দাতা হতে হয় রোগীর আপন ভাই-বোন যা ১-২% পরিবারে পাওয়া সম্ভবপর হয়। তবে রোগীর বয়স যত কম হয়, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন সফলতার হার তত বেশি হয়।

থ্যালাসেমিয়া সমস্যা প্রতিরোধে করণীয়
১) সচেতনতা বৃদ্ধি
সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে দেশে ব্যাপক হারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারী, বেসরকারী ও ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
২) থ্যালাসেমিয়া টেস্ট
বিবাহের পূর্বে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা। এটা নিশ্চিত করা গেলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু জন্মগ্রহণ করা সম্ভব না।
৩) নিকট আত্নীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন
অনেকেই ভাবেন নিজেদের মধ্যে বিয়ে দিলেই ভালো। কিন্তু নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন না করা। অনেক ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহের ফলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্মের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
৪) গর্ভের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা
মা-বাবা দুইজনই বাহক হলে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় ৮-১৪ সপ্তাহের মধ্যে আগত সন্তানের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে পরীক্ষায় যদি দেখা যায় সন্তান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত তাহলে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ডাক্তারের পরামর্শক্রমে সন্তান নেয়া থেকে বিরত থাকা যেতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া সমস্যা নিয়ে পরিসংখ্যান
•   বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১.৫% মানুষ থ্যালাসেমিয়া মাইনর রোগে আক্রান্ত অর্থাৎ থ্যালাসেমিয়া বাহক। বিশ্বে ৫ লক্ষ মানুষ থ্যালাসেমিয়া মেজর নিয়ে বেঁচে আছে।
•   যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজির তথ্যমতে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগীর সংখ্যা ৬০-৭০ হাজার।
•   বিশ্বজুরে প্রতিবছর অন্তত ১ লক্ষ থ্যালাসেমিয়া মেজর শিশু জন্মগ্রহণ করে, যার ৫০% জন্মায় দক্ষিনপূর্ব এশিয়ায়।
•   স্বল্প ও নিম্ন আয়ের দেশের প্রতিবছর চিকিতসার অভাবে প্রায় ৫০ হাজার শিশু মারা যায়।
কোন ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কিনা তা ইলেক্ট্রোফোরোসিস (electrophoresis) পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। বিবাহের পূর্বে এই পরীক্ষা দেশে বাধ্যতা মূলক করা গেলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব।
 
Source: https://www.shajgoj.com/thalassemia-definition-2-types-causes-prevention/