Newtec Pharma & Research Center
Human Health Care => Natural Medicine => Topic started by: LamiyaJannat on August 28, 2019, 04:08:40 PM
-
নানা রকম ফলমূল, ভেষজ আর মসলাপাতির আছে ঔষধি গুণ। খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন এনে এসব খেলে অনেক রোগই প্রতিরোধ করা যায়। সুস্থ থাকা যায়, ওষুধ ছাড়াই।
কাঁচা হলুদের মতো ভেষজের পানীয় সুস্থ থাকতে সহায়তা করেসুস্থ থাকতে হলে সঠিক নিয়ম মেনে জীবনযাপন করা জরুরি। রোগ হলে ওষুধপথ্য খেতে হয়ই, কিন্তু চাইলে খাবারদাবারে কিছু পরিবর্তন এনে এবং একটু নিয়মকানুন মেনে অনেক রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকা যায়। নানা রকম ফলমূল, ভেষজ আর মসলাপাতির আছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা—ঔষধি গুণ।
আমলকী
আমলকীতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, যা শরীরের অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কার্যকারিতা বাড়ায়। চুল সুস্থ রাখে। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমলকী হৃদ্রোগ প্রতিরোধ এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে।
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা
এটি এমন একটি জনপ্রিয় ভেষজ, যা হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যালোভেরা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে ও বয়সের ছাপ রোধ করে। এটি শুধু ত্বকের ক্ষত সারাতে নয়, এর আরও অনেক গুণ আছে। এতে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও এটি কাজ করে।
থানকুনি
চিকিৎসা ক্ষেত্রে থানকুনির ভূমিকা অপরিসীম। এটি মেধা ও স্মৃতিশক্তিকে বাড়াতে সাহায্য করে, তারুণ্য ধরে রাখে, চুল পড়া কমায়। সপ্তাহে দুবার থানকুনি ও তুলসী পাতার মিশ্রণের (পেস্ট) সঙ্গে আমলা বা আমলকী মিশিয়ে ১০ মিনিট চুলে মাখলে চুল পড়া বন্ধ হয়। ক্ষতিকর টক্সিন দেহ থেকে অপসারণেও সাহায্য করে।
কাঁচা হলুদ
একে ইন্ডিয়ান স্যাফরন বা গোল্ডেন স্পাইসও বলা হয়। এটি একটি প্রদাহবিরোধী ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ভেষজ। কাঁচা হলুদ হৃদ্রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এটি ব্যথানাশক ও ক্ষতনিবারক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
হরীতকী
বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদে ব্যবহৃত হয়ে আসা একটি ভেষজ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, চুল পড়া কমায়, ওজন কমাতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সর্দি, কাশি ও ত্বকের অ্যালার্জি বা চর্মরোগের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
তুলসী
দু–তিনটি তুলসী পাতার রস এক চা–চামচ মধুসহ খেলে হাঁপানি বা অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ঠান্ডা লাগা, কাশি, গলাব্যথা, সাইনোসাইটিস প্রভৃতি রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। কিডনির পাথর সারাতে ও মাথাব্যথা, দুশ্চিন্তা কমাতেও তুলসী পাতা সাহায্য করে।
জিরা
মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। এটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট অপসারণে সাহায্য করে। জিরা পাকস্থলীর হজমক্রিয়া বাড়ায়, লৌহের জোগান দেয়। খাবার থেকে হওয়া রোগ থেকে মুক্তি দেয় জিরা। এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
রসুন
প্রতিদিন রসুনের একটি কোয়া খেলে তা হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে, রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
মধু
খাঁটি মধুতে থাকে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য চিনির চেয়ে মধু কম ক্ষতিকর। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়া ট্রিগলিসেরাইডের (Triglyceride) মাত্রা কমায়, যা কিনা হৃদ্রোগের অন্যতম কারণ। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানির সঙ্গে এক চা–চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে ওজন কমে।
গাজর
এটি মূলত সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে থাকে ভিটামিন এ, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য উপাদান। এটি ক্যানসার ও হৃদ্রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও এটি সাহায্য করে।
লেবু
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। এটা ওজন কমাতে ও চুল ঝলমলে করতে সাহায্য করে। লেবু কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। পানিশূন্যতা মেটাতে এর জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়া হজমে সহায়ক, সর্দি–কাশি ও জ্বর প্রশমনে লেবুর ভূমিকা রয়েছে অপরিসীম।
পুদিনা
এটি একটি শীতল ভেষজ, যা বদহজম ও অগ্নিমান্দ্য দূর করে। এটি পিত্ত নিঃসরণ বাড়ায়। আইবিএসে (ইরিটেবল বয়েল সিনড্রোম) এটি ভালো কাজ করে। ঠান্ডারও প্রশমন ঘটায়।
বহেড়া
ত্রিফলার এক ফল এটি। বাকি দুট আমলকী ও হরীতকী। বহেড়ার রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এটি শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং যকৃতকে (লিভার) সুস্থ রাখে।
তিল
এটি আঁশসমৃদ্ধ ও নিরামিষ প্রোটিনের উৎস, যা রক্তচাপ কমায়, হাড় সুস্থ রাখে, প্রদাহ কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মেনোপজের সময় হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে।
আনার বা ডালিম
পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল এটি। যার রয়েছে ভেষজ গুণও। এতে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট ও পটাশিয়াম। এ ছাড়া এটি প্রদাহ ও প্রস্টেট ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধেও এটি কাজ করে। তা ছাড়া ডায়রিয়াতেও এটি ফলপ্রদ।
কালিজিরা
এটা সব রকম রোগেরই যেন মহৌষধ। প্রাচীনকাল থেকে এটি আয়ুর্বেদে ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিয়মিত কালিজিরা সেবনে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, একজিমা, হেপাটাইটিস-সি, মেটাবলিক সিনড্রোম, সাইনোসাইটিস নিয়ন্ত্রণ হয়। এ ছাড়া চুলকানি, অগ্নিমান্দ্য, মৃগীরোগ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে কালিজিরার।
টমেটো
এটি ভিটামিন সি–র একটি বড় উৎস। এতে ফোলেট ও ভিটামিন কে-ও বিদ্যমান। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, লিকোপেন থাকায় হৃদ্রোগ ও ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা কমায়। এটি ত্বকের পিগমেন্ট হওয়া থেকেও বাঁচায়।
আদা
আমাদের দেশে আদা মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর ভেষজ গুণ অনেক। এতে থাকা জিনজিরল একটি শক্তিশালী ঔষধি উপাদান। আদা বমিভাব, বিশেষত সকালের দুর্বলভাব দূর করে। এটি পেশির ব্যথা কমায় ও প্রদাহবিরোধী প্রভাব থাকায় অস্টিওআর্থ্রাইটিজে ভালো কাজ করে।
টক দই
টক দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক, যা অন্ত্রকে ভালো রাখে। এটি রুক্ষ ত্বককে মসৃণ করে এবং এতে থাকা প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। টক দই হাড়ের জন্য ভালো এবং এটি ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন রোধ করে।
আপেল
এটি অ্যাসিটিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নিধনে সাহায্য করে। রক্তের চিনির মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে। ওজন কমাতে ও পেটের মেদ কমাতে এর জুড়ি নেই। বলা হয়ে থাকে, প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে চিকিৎসকের কাছ থেকে দূরে থাকা যায়।
Source: Prothom Alo